কেন এই নাটকীয়তা

বিশ্বজিৎ দাসের খুনিদের গ্রেফতার নিয়ে চলছে রীতিমতো নাটক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, এ অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল তার ভাষায় ৮। গতকাল এ সংখ্যা ১১-তে দাঁড়ায়। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে নারাজ। কখনো বলছেন, এ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি, কখনো দু-তিনজনকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের নামধাম প্রকাশেও আপত্তি দেখাচ্ছে পুলিশ। বিরোধী দলের হরতালের দিন ছাত্রলীগের মিছিলকারীরা পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে ছবি দেখানো হয়েছে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়। খুনিদের ছবি ছাপা হয়েছে দেশের নেতৃস্থানীয় সব দৈনিকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে, বিশ্বজিতের হত্যাকারীরা ছাত্রলীগের কেউ নয়। কেন নয় এ বিষয়ে তারা একটি যুৎসই যুক্তিও দেখিয়েছে। বলেছে, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের কেউ শিবিরের কর্মী, কেউ বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করলেও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে তাদের অনেক আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মতে, বিরোধী দলের হয়েই তারা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। সরকারি দলের এসব যুক্তির যথার্থতা সম্পর্কে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমাদের বক্তব্য, মন্ত্রীর মতো সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বিশ্বজিৎ হত্যায় জড়িত সন্দেহে ৮ বা ১১ জনকে গ্রেফতার করার কথা বলা হলেও পুলিশ তা অস্বীকার করে কিভাবে? পুলিশের এ অস্বীকৃতি মন্ত্রীর বক্তব্যকে নাকচ করার শামিল। মোটা দাগে মন্ত্রীর সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নামান্তর। পুলিশের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সে কাজটি করছেন অবলীলাক্রমে, কাউকে পরোয়া না করেই। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড সরকারের ভাবমূর্তিতে যে কালিমা লাগিয়েছে তা মুছে ফেলা সত্যিকার অর্থেই দুষ্কর। ছাত্রলীগবেশী ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা গেলে অন্তত প্রমাণ করা যেত সরকার অন্যায়কারীদের বরদাশত করতে রাজি নয়; কিন্তু সে ক্ষেত্রেও যে নাটকীয়তা চলছে তা মানুষের অনুভূতিকে আহত করার জন্য যথেষ্ট। এ বিষয়ে তারা সচেতন না হলে সেটি দুর্ভাগ্যজনক নজির বলেই বিবেচিত হবে।